ডেটলাইন কলকাতাঃ শেষ হল কংগ্রেসের একটি অধ্যায়। প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার রাত ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ বেলভিউ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য,হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে কয়েকদিন ধরে তিনি ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। তাঁর প্রয়াণে বাংলার রাজনীতিতে একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। তাঁর মৃত্যুতে প্রদেশ কংগ্রেস–সহ বাংলার রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমেছে। প্রবীণ এই নেতা দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। রাজনীতির আঙিনায় তিনি ’ছোড়দা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর মৃত্যুতে গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল শোকস্তব্ধ। বাংলার রাজনীতিতে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানের নেপথ্যে সোমেন মিত্রের বিশেষ ভূমিকা ছিল। মূলতঃ তাঁর সঙ্গে মতানৈক্য থেকেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গড়েছিলেন মমতা। পরবর্তী সময়ে কয়েক বছরের জন্য তৃণমূলে এসেছিলেন সোমেন মিত্র। তাঁর প্রয়াণে মমতা বলেন, ”সোমেন মিত্রর মৃত্যুর খবরে আমি স্তম্ভিত। ওঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।” বাংলার আরও এক প্রবীন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন,”সোমেন মিত্র আর নেই এটা ভাবতে পারছিনা, বাংলার একটা অধ্যায় সমাপ্ত হলো। সংগ্রাম করে, প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক, আমাকে জনপ্রতিনিধি করার মূল কারিগর সোমেন দা কে হারিয়ে আমি দুঃখে কাতর ও বেদনাহত হলাম”। জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্ব ভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁর শোকবার্তায় বলেছেন,”আমরা সোমেন মিত্রকে ভালবাসা, সম্মান এবং সুখ্যাতির সঙ্গে মনে রাখব। ওঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।” শুধু কংগ্রেসই নয়,বিরোধী রাজনৈতিক দলের বহু নেতাও সোমেন মিত্রের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বলেছেন,”ছোটবেলা থেকে রাজ্যের যে ক’জন রাজনৈতিক নেতার নাম শুনেছি, তার মধ্যে অন্যতম সোমেন মিত্র। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল। পরে বাম-কংগ্রেস বন্ধুত্বের পর থেকে আরও কাছাকাছি এসেছিলাম। সকালে উঠে খবরটা শুনে অত্যন্ত ব্যথা অনুভব করছি। পরিবাররে সকলের প্রতি সমবেদনা রইল।” ১৯৪১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সোমেন্দ্রনাথ মিত্র। যদিও সোমেন মিত্র নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন রাজনীতির জগতে। ১৯৭২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শিয়ালদহ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি সাতবার জিতেছিলেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে দিয়ে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস নামে নতুন দল গঠন করেন। ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। সেই বছরই লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে জেতেন তিনি। ২০১৪ সালে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কংগ্রেসে ফিরে আসেন। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর স্ত্রী শিখা মিত্র এবং ছেলে রোহান মিত্রও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।